image-133196-1547470311

মেয়েরা বিয়ের জন্যে পছন্দ করতে পারবে কি ?

ইসলাম কিছু কাজে দেরি করতে নিষেধ করেছেন। তন্মধ্যে অন্যতম একটি হলো উপযুক্ত ছেলে-মেয়ের বিয়ে সম্পাদন করা। যখন কোনো মেয়ে কিংবা ছেলে বিয়ের উপযুক্ত হবে তখন দেরি না করে বিয়ে দেয়াই উত্তম।

বিয়ে ক্ষেত্রে ছেলে যেমন মেয়ে পছন্দ করতে পারবে তেমনি মেয়েরও ইখতিয়ার রয়েছে ছেলে পছন্দ করার। ‘পরিবারের পছন্দনীয় ছেলেকে বিয়ে করতে হবে’-এ মর্মে প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো মেয়ের ওপর জোর করার কোনো নিয়ম নেই। হাদিসে পাকে এসেছে-

> হজরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন এক মেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা, কতইনা উত্তম পিতা। আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সঙ্গে (আমাকে) বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি।

এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে (মেয়েটির) পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ বিয়ে হবে না, (মেয়েটিকে বললেন) তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও’। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)

হাদিসের আলোকে পাত্র নির্বাচনে মেয়ের মতামত নেয়া আবশ্যক। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র নির্বাচনে কোনোভাবেই কোনো মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর খাটানো ঠিক হবে না। তবে কোনো পিতামাতাই চান না তার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাক।

তবে ছেলে নির্বাচনের আগে অবশ্যই মেয়ের সঙ্গে পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পরামর্শ করা জরুরি। কেননা সারা জীবন সংসার করবে মেয়েটি। পরিবার যদি ভালো কোনো পাত্র নির্বাচন করে, তার সঙ্গে ছেলের ভালো দিকগুলো তুলে ধরা আবশ্যক।

আর মেয়ে যদি কোনো ছেলেকে পছন্দ করে সেক্ষেত্রে পরিবারের লোকদেরকেও ছেলের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়া জরুরি। তাহলে পরিবারও ছেলের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে সহজ হবে। কেননা মেয়ে তার অধিকারের ব্যাপারে বেশি হকদার।

তবে বিয়েকে কেন্দ্র করে কিংবা পিতা-মাতা বা পরিবারের অগোচরে পালিয়ে ভালোভাবে চেনা-জানাবিহীন কোনো ছেলেকে বিয়ে করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। যদিও প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ের জন্য ছেলে নির্বাচনের অধিকার দিয়েছেন প্রিয়নবি

file-1908271224

মানব জীবনে বিয়ের গুরুত্ব

মানব সভ্যতা বিকাশের জন্য দরকার সমাজ ও রাষ্ট্র। সমাজের প্রথম সোপান হলো পরিবার। পারিবারিক জীবন শুরু হয় বিয়ের মাধ্যমেই। কাজেই মানব সভ্যতা বিকাশে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ের গুরুত্ব

বিয়ে প্রত্যেকটি পুরুষ ও নারীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারী-পুরুষের হৃদয়ে প্রশান্তি লাভের নির্ভরযোগ্য এক আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিবাহবন্ধন। নারী পুরুষের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়ে হচ্ছে একমাত্র বৈধ উপায় এবং মানুষের চরিত্র রক্ষার হাতিয়ার।

এইজন্য মানবতার ধর্ম, আল্লাহ্‌ প্রদত্ত জীবন বিধান ইসলাম বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরানূল কারীমে বলেছেন, “তোমার পছন্দ অনুযায়ী তুমি বিবাহ কর।”

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ের গুরুত্ব

মানুষ সামাজিক জীব, মানুষ কখনো একা থাকতে পারে না। একসাথে থাকার যাত্রা শুরু হয় বিয়ের মাধমেই, বিয়ের মাধ্যমেই দুটি মানুষ একসাথে যাত্রা শুরু করে, একে অপরের সাথে সকল আবেগ, অনুভুতি, দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করে থাকে। বিয়ের মাধ্যমেই একজন পুরুষ এবং একজন নারী একে অপরের সকল কাজকর্মের সঙ্গি হয়ে যায়। তাদের মাঝে প্রেম প্রীতি, ভালোবাসা গড়ে ওঠে এবং সন্তান-সন্ততি লাভ করে। সুতরাং বলা যায় মানব জীবনে বংশ রক্ষার ধারা বিবাহ বন্ধনে বাঁধা।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ের গুরুত্ব

শুধু ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। হার্ভার্ড হেলথ পাবলিকেশন আমেরিকাতে ১,২৭,৫৪৫ জন মানুষের উপর এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে যে, বিবাহিত পুরুষেরা, অবিবাহিত পুরুষদের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকে এবং বেশি দিন বাঁচে। গত ১৫০ বছরের গবেষনায়ও দেখা গিয়েছে যে, বিবাহ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। জাপানের বিজ্ঞানীদের মতে, যে সমস্ত লোকেরা কখনোই বিয়ে করেনি, তাদের ক্ষেত্রে কার্ডিওভাসকুলার রোগের (হৃদরোগ) সম্ভাবনা অন্যান্য বিবাহিত মানুষের চেয়ে তিন গুণ বেশি হয়ে থাকে।

marriage

রিলেশন বনাম বিয়ে

কয়জন ছেলে বুকে হাত রেখে বলতে পারবে, আজ তার গার্লফ্রেন্ড ধর্ষণের শিকার হলেও সে তার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে রাজি?

কয়জন মেয়ে বুকে হাত রেখে বলতে পারবে, তার বয়ফ্রেন্ড আজ সড়ক দুর্ঘটনায় একটা হাত বা একটা পা হারালেও তাকে বিয়ে করতে রাজি? ..

এই দুটি প্রশ্নের উত্তর বের করতে পারলেই ভালবাসা আর রিলেশনের মধ্যকার তফাৎগুলো বের হয়ে যায়।

খারাপ কিছু ঘটে গেলে, সেই মানুষটাকে নিয়ে যদি আপনার লড়াই করে টিকে থাকার মানসিকতা না থাকে, তবে তা আপনার ভালবাসা নয়, সেটা শুধুই
রিলেশন মাত্র।

রিলেশন হচ্ছে, দশজনকে দেখে আপনি একজনকে বেছে নিয়েছেন তার গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করে। আর যখন দুর্ভাগ্যবশত তার গ্রহণযোগ্যতা কমে গেল আপনিও হারিয়ে গেলেন।

ভালবাসায় গ্রহণযোগ্যতা ও অগ্রহণযোগ্যতায় কিছু আসে যায় না।

ছেলেটি এখনও বেকার। এদিকে মেয়েটির বিয়ের সম্বন্ধ আসছেই। মেয়েটি বারবার বিয়ে ভেঙে দিচ্ছে। রাত জেগে চিন্তার চোখে কালশিটে দাগ হয়ে মেয়েটি এখন রাতজাগা পাখি। এটা ভালবাসা…

বারবার সুন্দরী মেয়েদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে
ছেলেটি তার কালো বেঁটে প্রেমিকার মাঝেই সুখ খুঁজে পায়। এটাই ভালবাসা…

স্বামীর পাঁচবছর জেল হয়েছে। প্রতিদিন সাক্ষাৎ করতে দেবে না জেনেও স্ত্রী সকাল থেকে জেলখানা গেইটে বসে থাকে। এটা ভালবাসা…

এসিড সন্ত্রাসের শিকার বউয়ের মুখটা চেনা যায় না।
তারপর তার স্বামীর কাছে মেয়েটি রূপকথার রাজকন্যা। এটাই ভালবাসা…

শেষকথা, রিলেশনে জড়ানোটা অনেক সস্তা ও সহজ ব্যাপার। আজ রিলেশন, কাল রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেওয়া, পরশু ঘুরতে যাওয়া, যুগল ছবি আপলোড দিয়ে রোমান্টিক ক্যাপশন দেওয়া, কথায় কথায় love u বলা, এগুলো সবাই পারে…

কিন্তু ভালবাসতে সবাই পারে না। যেখানে ভালবাসা আছে, সেখানে নিজের কাছে একটা honest কমিটমেন্ট
আছে। আর তা হলো.. ” যা-ই হোক না কেন, মানুষটাকে নিয়ে লড়াই করে অন্তত শেষটুকু দেখা “

বিয়ে সংক্রান্ত যে কোনো আইন বা জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা বা পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করুন আমাদের কনসালট্যান্ট এর সাথে।